Wednesday, May 21, 2008

এক

বাদশা আমানুল্লাহ্র নিশ্চয়ই মাথা খারাপ। না হলে আফগানিস্তানের মত বিদঘুটে গোঁড়া দেশে বল-ডান্সের ব্যবস্থা করতে যাবেন কেন? স্বাধীনতা দিবসে পাগমান শহরে আফগানিস্থানের প্রথম বল-ডান্স হবে।
আমরা যারা বিদেশী তারা এ নিয়ে খুব বেশি উত্তেজিত হইনি। উত্তেজনাটা মোল্লাদের এবং তাদের চেলা অর্থাৎ ভিশতি, দর্জী, মুদী, চাকর-বাকরদের ভিতর।
আমার ভৃত্য আবদুর রহমান সকাল বেলা চা দেবার সময় বিড়বিড় করে বললে, 'জাত ধম্মো আর কিছু রইল না।'
আবদুর রহ্মানের কথায় আমি বড় একটা কান দিই নে। আমি শ্রীকৃষ্ণ নই; 'জাত ধম্মো' বাঁচাবার ভার আমার স্কন্ধে নয়।
'ধেঁড়ে ধেঁড়ে হুনোরা ডপ্‌কি ডপ্‌কি মেনিদের গলা জড়িয়ে ধেই ধেই করে নৃত্য করবে।'

আমি শুধালুম, 'কোথায়? সিনেমায়?'
আর আবদুর রহমানকে পায় কে? সে তখন সেই হবু ডান্সের যা একখানা সরেস রগরগে বয়ান ছাড়লে, তার সামনে রোমান কুকর্ম কুকীর্তি শিশু। শেষটায় বললে, 'রাত বারোটার সময় সমস্ত আলো নিবিয়ে দেয়া হয়। আর তারপর কি হয় সে-সব আমি জানি নে হুজুর।'
আমি বললুম, ' তোমার তাতে কি, ভেটকি-লোচন?'
আবদুর রহমান চুপ করে গেল। 'ভেটকি লোচন', 'ওরে আমার আহ্লাদের ফুটো ঘটি' এসব বললেই আব১দুর রহমান বুঝতে পারত বাবু বদমেজাজে আছেন। এগুলো আমি মাতৃভাষা বাঙলাতেই বলতুম। আবদুর রহাম্ন ঝান্ডু লোক; বাঙলা না বুঝেও বুঝত।
ঝিরঝিরে ঠান্ডা হাওয়ায় সন্ধ্যার সময় বেরিয়েছি। পাগমানের ঝোপে ঝাপ্রে হেথা হোথা বিজলী বাতি জ্বলছে। পরিষ্কার তকতকে ঝকঝকে পিচ-ঢালা রাস্তা। আমি আপন মনে ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি, এটা হল ভাদ্দোর মাস। কাল জন্মাষ্টমী গেছে। আমার জন্মদিন। মা'র মুখে শোনা। এখন সিলেটে নিশ্চয়ই জোর বৃষ্টি হচ্ছে। মা দক্ষিণের ঘরের উত্তরের বারান্দায় মোড়ার উপর বসে আছে। তার কুড়িয়ে-পাওয়া মেয়ে চম্পা তার পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর হয়তো বা জিজ্ঞেস করছে, 'ছোট মিয়া ফিরবে কবে?'

বিদেশে বর্ষাকাল আমাল কাল। কাবুল কান্দাহার জেরুজালেম বার্লিন কোথাও মনসূন নেই। ভাদ্দোর মাসের পচা বৃষ্টিতে মা অস্থির। তাঁর নাইবার শারি শুকোচ্ছে না, ভিজে কাঠের ধূয়োয় তিনি পাগল, আর আমি দেখছি হুড়মুড় করে বৃষ্টি নেমে আসছে, খানিকক্ষণ পরে আবার রোদ। আঙ্গিনার গোলাপ গাছে, রান্নাঘরের কোণে শিউলি গাছে, পিছনের চাউর গাছের পাতায় পাতায় খুশীর ঝিলিমিলি।
এখানে সে শ্যামল-সুন্দরের দর্শন নেই।

No comments: